পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

পুতুল পুরষ্কার



মামুন ম. অাজিজ

অামাদের ওখানে একটা খেলার স্কুল ছিলো;
অামরা খেলতে যেতাম বিকেলে দলে দলে;
একদিন শিক্ষক বললেন, অাজ পুতুল বানানোর খেলা হবে -
সকলে ঝুট কাপড় জুড়ে জুড়ে পুতুল বানাবে
কালি দিয়ে হবে চোখ নাক ঠোঁট, কাঠি দিয়ে হাত পা;
কিন্তু একা একা নয়, ছোট ছোট দলে মিলেমিলে...
প্রতি দলে মোট পাঁচজন...

সকলে দল গড়তে গড়তে জুড়লাম হুল্লোর কারণ
শিক্ষক বলেছেন জিতবে যে দল তার প্রত্যেকে পাবে অনিন্দ্য সুন্দর পুরষ্কার।

ওখানে দুটো ছোট খাট মেয়ে অাসতো...
ওরা দেখতে খুব বেশি কালো ছিলো,
ওরা চুপচাপ বসে এক কোনে খেলত অানমনে,
অনেকেই ওদের কালি ১ অার কালি ২ বলে ডাকতো;
ওরা কষ্ট পেতো কিনা জানি না তবে
মাঝে মাঝে চোখের কোণে দেখা যেত জল।

দলে দলে পুতুল যুদ্ধে মাঠে নেমে পড়েছি কিন্তু ওরা দুজন তখনও সেই কোণে দাঁড়ানো ঠাঁয়,
কোন দলে জায়গা হয়নি, কেউ ডাকে নি
কেউ নেইনি দলে যদিও একটি দলে তখনও সদস্য মাত্র তিনজন...
ওরা ডাকছে না, এরাও যাচ্ছে না...

শিক্ষক মশাই এগিয়ে এলেন....
অনেকদিনের পর্যবেক্ষন ওনার, অাজ জল ঢাললেন,
বললেন তোমরাতো কারও চেয়ে কম সুন্দর নও, তারপর শোনালেন সাম্য বানী,-রঙে নয় গুনে পরিচয়...
ছবি দেখালেন পত্রিকায় কুচকুচে কালো মিস ওয়ার্ল্ড,
অলিম্পিকে স্বর্নজয়ী ব্ল্যাক ডায়মন্ড,
বিখ্যাত এক বিজ্ঞানী, হলিউডের অস্কার একটর, নোবেল লরিয়েট নেলসন ম্যান্ডেলা...
অামরা শেষজনকে সবাই চিনি তখন, জানি তার যৌবন দিনের বন্দী দশা... যাহোক এবার
বোধহয় কালো দু' কন্যার ঘুচলো হতাশা।

পাঁচজন করে করে দল হলো মোট ১৩ টি
পুতুল খেলায় অানন্দে কেটে গেলো ঘন্টা দু তিনটি
একসময় শেষও হলো....
দুজন বিচারকও এলেন, বিচার করলেন...
বিজয়ী হলো শেষ দল যেখান কালো মেয়েদুটো ছিলো,
সবাই ওদের দিকে এই প্রথম জীবনে ঘুরে তাকালো...

এবার পুরষ্কারের পালা...
অামাদের সাম্যবাদী, কালো দরদী শিক্ষক মশাই দুটো কথা বলার ছলে জানালেন খুব সুন্দর এবং দামী পুরষ্কার দেয়া হবে, বিদেশি পুতুল, ধবদবে সাদা, ফর্সা সুন্দর, অবিকল যেন অপ্সরি...

ওরা পাঁচজন পুতুল নিচ্ছিলো, অামি তাকিয়ে ছিলাম।
কালো মেয়ের হাতে সাদা পুতুল উঠছিলো
অামি উচ্চস্বরে করে বলে উঠলাম, 'স্যার
একটাও পুরষ্কার কালো হলো না কেনো?'

উনি জবাবে বললেন, 'দূর বোকা!
পুরষ্কারে কি কেউ অসুন্দর জিনিস দেয় নাকি?'

২৭/২/২০১৮

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন